তুরস্ক ও সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে


দৈনিক আলোড়ন
তুরস্ক ও সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে

তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানা ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ১১ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮ হাজার ৫৭৪ জন হওয়ার কথা জানিয়েছে। অন্যদিকে সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা ২ হাজার ৬৬২ জনে দাঁড়িয়েছে। সব মিলিয়ে দুই দেশে মোট নিহত ১১ হাজার ২৩৬ জনে পৌঁছেছে। খবর এপি ও আল-জাজিরার।

এদিকে ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় নাগরিকদের মৃত্যুতে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। আজ বৃহস্পতিবার শোক পালন করা হবে। গতকাল এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন, বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। ভূমিকম্পে নিহতদের আত্মার শান্তির জন্য দেশের সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়ানোর শঙ্কা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পে দুই দেশে মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। সংস্থাটি বলছে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষের বসবাস। এসব এলাকার সবাই সংকটে পড়েছে। লাখ লাখ মানুষ খোলা আকাশের নিচে আছে।

তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটিতে ভূমিকম্পে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ। আহতের সংখ্যা ৫০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। আর সিরিয়ায় এ সংখ্যা ৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম গার্ডিয়ানের এক খবরে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় প্রায় ৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, সংখ্যাটি শুধু সিরিয়ার সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকা অংশগুলোর বলে মনে হচ্ছে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি দেশের উত্তর-পশ্চিমের অন্যান্য অংশের অবস্থা সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে তুর্কি প্রেসিডেন্ট

ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে গেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। তিনি প্রথমে কাহরামানমারাস শহরের কেন্দ্র এবং পাজারসিক জেলা পরিদর্শন করবেন। পরে তিনি হাতায়ে যান।

এসময় স্থানীয়রা উদ্ধারকাজ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিবিসির খবরে বলা হয়, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এরদোগান ভুল-ত্রুটির কথা স্বীকার করেন। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত প্রদেশগুলোকে এক বছরের মধ্যে পুনর্গঠন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এরদোগান বলেন, যদি কেউ তাঁবুতে থাকতে পছন্দ না করে তাহলে আমরা তাদের ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে অ্যালানিয়া, মেরসিন ও আন্টালিয়ার হোটেলে স্থানান্তর করতে পারি।

ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তুরস্কের গাজিয়ানতেপ। সেখানে বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকা পড়ে। সেখানের বাসিন্দারা জানিয়েছে, প্রথম ১২ ঘণ্টায় কোনো উদ্ধারকারী দল পৌঁছেনি। তাছাড়া সোমবার বিকেলের দিকে যখন উদ্ধারকারীরা এসে পৌঁছায় তখন মাত্র কয়েক ঘণ্টা কাজ করতে পারে। এরপরই রাতের জন্য বিরতিতে যেতে হয় উদ্ধারকারীদের।

চলতি বছরের মে মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে তুরস্কে। কিন্তু এর মধ্যেই ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। ধারণা করা হচ্ছে, এই ইস্যুটি আসন্ন নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। ভূমিকম্পে তুরস্ক সরকারের জরুরি প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তার ওপর নির্ভর করতে পারে এরদোয়ান ফের ক্ষমতায় আসতে পারবেন কিনা।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্ক ও সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এরপর অনেকগুলো শক্তিশালী পরাঘাত ও দুই দফা ভূমিকম্প হয়। এতে দুই দেশে ধসে পড়েছে কয়েক হাজার ভবন। এসব ভবনের নিচে আটকা পড়েছেন বহু মানুষ। ধ্বংসস্তূপ সরানোর সঙ্গে সঙ্গে লাশের সংখ্যা বাড়ছে।