দিনের পর দিন বেড়েই চলছে প্রযুক্তির উৎকর্ষ। একের পর এক আবিষ্কার মানবজীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলছে। একটা সময় ছিল যখন তরুণদের অনেকেই অবসর কাটাতে বই পড়তেন। নতুন বইয়ের ভাঁজ খুলে পৃষ্ঠা উল্টে পড়ার মধ্যে তারা অন্য রকম এক আনন্দ পেতেন। কিন্তু প্রযুক্তির তালে তাল মেলাতে গিয়ে কমেছে বই পড়ার আগ্রহ। প্রযুক্তির কল্যাণে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম বই পড়ার আগ্রহ গ্রাস করেছে।
যদিও কর্থ প্রযুক্তির এই যুগেও নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার। সপ্তাহের শনি থেকে বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত লাইব্রেরি খোলা থাকছে। সেই সঙ্গে রয়েছে- নিয়মিত পাঠকও যাতায়াত। প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই শতাধিক বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার পাঠক এখানে বই পড়ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের শায়েস্তা খান রোড এলাকায় তিন তলাবিশিষ্ট গণগ্রন্থাগারের তৃতীয় তলায় লাইব্রেরিয়ানের কক্ষ, শিশু পাঠকক্ষ, পত্রিকা/সাময়িকী পাঠকক্ষ, বিজ্ঞান/রেফারেন্স পাঠকক্ষ ও নারীদের নামাজ কক্ষ। দ্বিতীয় তলায় অফিস কক্ষ, জুনিয়র লাইব্রেরিয়ানের কক্ষ, সাইবার ক্যাফে ও সাধারণ পাঠকক্ষ। নিচ তলায় বুক স্টেক, সেমিনার কক্ষ, অডিটোরিয়াম ও জেনারেটর কক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৭ হাজারের বেশি বই থাকা এ লাইব্রেরির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১১৩। তবে গড়ে নিয়মিত পাঠক দুই শতাধিক। পাশাপাশি তাদের অধীনে তালিকাভুক্ত লাইব্রেরির সংখ্যা ৫৩।
লাইব্রেরিতে বই পড়তে আসা রোদেল আহমেদ নামে এক যুবক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছি। চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রতিদিনই পড়তে আসি। এখানে বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে। সেই সঙ্গে যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে।
কথা হয় আরেক পাঠক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। অবসর সময়ে বিভিন্ন বই পড়ে এখানে সময় কাটাই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, লাইব্রেরিতে আগে যেমন পাঠক ছিল এই প্রযুক্তির যুগেও আগের মতোই পাঠক রয়েছে। লাইব্রেরিতে প্রতিদিনই শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আসছেন বই পড়তে। সেই সঙ্গে তাদের সদস্য সংখ্যাও বাড়ছে। সদস্যরা নিয়মিত বই নিচ্ছেন আবার জমাও দিচ্ছেন। সদস্যের বাইরে পাঠকরা লাইব্রেরিতে বসে পড়াশোনা করছেন। কোনো কোনো শিক্ষার্থী এখান থেকে বই পড়ে চাকরির প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
কিন্তু লাইব্রেরিটিতে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি সত্ত্বেও পাঠকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা। এত বড় ভবনে একজন ক্লিনার নেই। এছাড়া কম্পিউটার অপারেটর, ক্যাটালগার ও নাইটগার্ড নেই। ফলে বর্তমানে যারা সেবা দিচ্ছেন তাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে।
গণগ্রন্থাগারের জুনিয়র লাইব্রেরিয়ান মো. রেজাউল আলম রেজা সাংবাদিকদের বলেন, পাঠক সংখ্যা বাড়ছে। হার্ডকপি পড়তে আগ্রহী পাঠক সবসময়ই থাকে। এরা কখনো কমে না। জ্ঞানপিপাসু পাঠক যারা আছেন তারা আমাদের লাইব্রেরিতে আসেন। দিন দিন সেই সংখ্যা বাড়ছে। সদস্য সংখ্যা আরও বাড়াতে আমরা চেষ্টা করছি।
পাঠকদের সুবিধা সম্পর্কে তিনি বলেন, লাইব্রেরির সদস্য হতে ছাত্রদের জন্য ৩০০ টাকা জামানত নেওয়া হয়। সর্বসাধারণের জন্য ৫০০ টাকা। যারা সদস্য হবেন তারা এখান থেকে বই নিয়ে বাসায় পড়তে পারবেন। সেই সঙ্গে সদস্যপদ বাতিল করলে টাকা ফেরত পাবেন।
জুনিয়র লাইব্রেরিয়ান রেজাউল আরও বলেন, দেশের মানুষ এখনো বইবান্ধব। সবাইকে একভাবে পরিমাপ করা যাবে না। যারা পুরনো যুগের মানুষ কিংবা যাদের বয়স চল্লিশোর্ধ্ব তারা হার্ডকপি পড়তেই ভালোবাসেন। অনলাইনে হয়তো তারা কিছু তথ্য নেন। তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সবাই যে অনলাইনে পড়েন এটা ঠিক নয়।
লাইব্রেরিয়ান দেবাশীষ ভদ্র বলেন, লাইব্রেরিতে ২৭ হাজারের ওপর বই আছে। সব ধরনের বই আছে। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু কর্নার করছি। এটাকে আরও ভালোভাবে বিশাল আকারে করার চেষ্টা করছি। মুক্তিযোদ্ধা কর্নারও করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। সপ্তাহে শনি থেকে বুধবার প্রতিদিনই লাইব্রেরি খোলা থাকে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় দেড় থেকে দুই শতাধিক পাঠক এখানে এসে বই পড়েন। শহরের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের তালিকাভুক্ত ৫৩ লাইব্রেরি রয়েছে।
তিনি বলেন, আমি পাঠক সংখ্যা কম বলবো না। যেহেতু আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি সে হিসেবে লাইব্রেরিকেও স্মার্ট করার চিন্তা করতে হবে।
দেবাশীষ ভদ্র বলেন, গ্রন্থাগার দিবসে আমাদের আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আছে। বিভিন্ন দিবসে আমাদের উদ্যোগে প্রতিযোগিতা হয়। আমাদের প্রতিপাদ্য ‘স্মার্ট গ্রন্থাগার, স্মার্ট বাংলাদেশ’।
প্রতিবন্ধকতার প্রশ্নে তিনি বলেন, কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এগুলো সবাই জানে এবং সবাই চেষ্টা করছি যেন দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করা যায়। আশা করছি, দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান হবে। সেই সঙ্গে প্রযুক্তির তালে তাল মিলিয়ে আমরাও এগিয়ে যেতে পারব।