চাকরির প্রলোভনে নারী নির্যাতন


দৈনিক আলোড়ন
চাকরির প্রলোভনে নারী নির্যাতন

উন্নত জীবনের আশায় এবং আর্থিক সচ্ছলতার প্রলোভনে পড়ে দেশে বহু মানুষ পাচারের শিকার হন। প্রলোভনে পড়ে যারা মানব পাচারের শিকার হন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা জানেন না যে তারা আসলে পাচারের শিকার হচ্ছেন।

কাঙ্ক্ষিত মানের চাকরি না পেয়ে যারা হতাশায় ভোগেন তাদের অনেকেরই ধারণা, কোনোভাবে বিদেশে যেতে পারলেই জীবন বদলে যাবে। মানব পাচার চক্রের সদস্যরা এ দুর্বলতার সুযোগটি নেয়। ভুয়া রিক্রুটিং এজেন্সির লোকদের প্রধান টার্গেট বেকার নারী।

মধ্যপ্রাচ্যে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তুলনামূলক কম টাকায় বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে মানুষকে প্রলুব্ধ করা হয়। মূলত দরিদ্র পরিবারের নারীদেরই প্রলোভনের ফাঁদে ফেলা হয়; তাদের জানানো হয়, কোনো অর্থ ছাড়াই বিদেশে পাঠানো হবে। বাস্তবে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে তাদের বিক্রি করা হয় দালাল চক্রের কাছে।

এরপর বিভিন্ন জায়গায় আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়ে আদায় করা হয় টাকা। নির্যাতন থেকে বাঁচতে ভুক্তভোগী নারীরা যোগাযোগ করেন তাদের স্বজনদের সঙ্গে। কোনো উপায় না দেখে স্বজনরা প্রতারকদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করেন।

রিক্রুটিং এজেন্সির প্রলোভনে পড়ে মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হন, সেজন্য তাদের সচেতন করার পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশে যাওয়ার পর ভাষাগত সমস্যার কারণেও আমাদের দেশের কর্মীরা নানারকম জটিলতার সম্মুখীন হন। কাজেই সংশ্লিষ্টদের উচিত বিদেশে যাওয়ার আগে কোনো বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি ভাষাগত দুর্বলতা কাটানোরও চেষ্টা করা। অনেকে জেনেশুনে ঝুঁকিপূর্ণ পথে বিদেশে যাওয়ার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হন।

এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ পথে পা বাড়ানোর আগে সংশ্লিষ্টদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। পাচারের শিকার ব্যক্তিদের দেশে ফেরাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া উচিত। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এতে প্রতারকরা আরও বেপরোয়া হয়। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ না বাড়ালে এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে। বিভিন্ন দেশে শিক্ষিত ও দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে; এ চাহিদা আগামীতে আরও বাড়বে। কাজেই বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর বিষয়েও পদক্ষেপ নিতে হবে।

মানব পাচার প্রতিরোধ, ভুক্তভোগীকে সহায়তা এবং পাচার চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে বিশ্বজুড়ে সরকারগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে আরও বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।