নিত্যপণ্যে অস্বস্তি, নাগালের বাইরে মাছ-মাংস


দৈনিক আলোড়ন
নিত্যপণ্যে অস্বস্তি, নাগালের বাইরে মাছ-মাংস

দেশের বাজারে দফায় দফায় বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। অবস্থা এমন যে, মাছ-মাংস ছুঁয়ে দেখতে পারছেন না মধ্য ও নিম্নবিত্তরা। এদিকে বাজারে দাম বেড়েছে মুরগি ও পেঁয়াজের। কমেছে ডিম ও কাঁচা মরিচের দাম।

শুক্রবার (৩ মার্চ) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ২২০ থেকে ২৩০ টাকা।

সোনালি মুরগির কেজি ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩১০-৩২০ টাকা। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৮০-২৯০ টাকা।

রাজধানীর রায়ের বাজারের মুরগি বিক্রেতা সোহেল রানা বলেন, আবারও দাম বেড়েছে মুরগির। ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বাড়তি। শবে বরাতকে সামনে রেখে বেড়েছে মুরগির দাম।

এদিকে বাজারে গরুর মাংস আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হতো ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১১০০ টাকায়। আগে বিক্রি হতো ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায়।

প্রকারভেদে সাধারণ চাষের মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৪০-৫০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে ইলিশ-চিংড়ির পাশাপাশি দেশি পদের (উন্মুক্ত জলাশয়ের) মাছগুলোর দাম বেড়েছে ১০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত।

শুক্রবাদ বাজারে কথা হয় নাজমুল হোসেন নামের এক ক্রেতার সঙ্গে।

তিনি বলেন, আমাদের মতো হিসাব করে চলা মানুষ আর গরুর মাংস খেতে পারবে না। কমদামে ব্রয়লারও এখন কেনা যায় না। মাছের দামও বেড়েছে। আমরা এখন কী খাবো?

হাতিরপুল বাজারের মাংস বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ছাগলের মাংসের দাম ১০০ থেকে দেড়শ টাকা বেড়েছে। মানুষ মাংস কিনছে কম। বিশেষ করে খাসির মাংসের ক্রেতা একদমই নেই।

চাষের পাঙাশ-তেলাপিয়া থেকে শুরু করে দেশি প্রজাতির সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। আগে বাজারে প্রতি কেজি পাঙাশ বিক্রি হতো ১৫০-১৬০ টাকা, যা এখন ১৮০-২০০ টাকায় ঠেকেছে। অন্যদিকে তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২২০-২৫০ টাকা। যা আগে ১৮০-২০০ টাকায় কেনা যেত।

মাছ বিক্রেতা কবির জানান, তার দোকানে প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-১০০০ টাকায়। যা আগে ৫০০-৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করতেন। অন্যান্য চাষের মাছগুলোও বেশ বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। রুই, কাতলা, মৃগেল বিক্রি হচ্ছে ৩৪০-৩৬০ টাকা কেজিতে, যা আগে ২৮০-৩২০ টাকা ছিল।

অন্যদিকে বাজারে দেশি প্রজাতির টেংরা, শিং, গচি, বোয়াল মাছের কেজি ৬৫০-৮০০ টাকা। যা ছিল ৬০০-৬৫০ টাকার মধ্যে। তবে এসব মাছ চাষের হলেও কিছুটা কম দামে মিলছে। সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে মাছের বাজারেও। সে কারণে দাম বেড়েছে।

এদিকে, বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম একটু কমেছে। ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ১৯০ টাকা।

ডিম বিক্রেতা কাজল সরকার বলেন, ফার্মের মুরগির ডিমের দাম একটু কমেছে। ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। পাড়া-মহল্লার দোকানে ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। অন্য ডিম আগের দামেই আছে।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, আকারভেদে বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়। প্রতি কেজি শসা ৫০-৬০, বেগুন ৬০-৮০, টমেটো ৩০-৪০, শিম ৫০-৬০ ও করলা ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাল কুমড়া প্রতিটি ৫০-৬০, লাউ আকারভেদে ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০, পটল ৮০, ঢেঁড়স ১০০, কচুর লতি ৬০-৭০, পেঁপে ৩০-৪০, বরবটি ১০০ ও ধুন্দুল ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কমেছে কাঁচামরিচের দাম। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচের কেজি ছিল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকায়।

পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। বড় রসুনের কেজি ১৪০ টাকা। ছোট রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়।

বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। খোলা চিনি প্রতি কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়।

খোলা আটার কেজি ৬০ টাকা। প্যাকেট আটা ৬৫ টাকা, যা আগে কেজি ছিল ৭০ টাকা। দুই কেজির প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।

দেশি মসুর ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। ইন্ডিয়ান মসুরের ডালের কেজি ১২০-১২৫ টাকা। বাজারে সয়াবিন তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৮৭ টাকায়। লবণের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকায়।