নির্যাতনের কচড়া


Apurbo Ahmed Jewel
নির্যাতনের কচড়া

অপূর্ব আহমেদ জুয়েল (বিশেষ প্রতিবেদনঃ)    বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন সরকার দলীয় গুন্ডা বাহিনীর মত আচরণ করে। আগে যেখানে শুধু বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা নির্যাতিত হত, নিপীড়িত হত, এখন সেখানে সবাই মোটামুটিভাবে সরকারের নির্যাতনের লক্ষ্যবস্তুতে রূপান্তরিত হয়েছে।

অতি সম্প্রতি লেখক মুশতাক জেল হাজতে মারা গিয়েছেন। তার অপরাধ ছিল স্বাস্থ্যখাতের এক বড় আমলাকে ইঙ্গিত করে কার্টুন আঁকা! কোনো মন্ত্রী বা সাংসদ না, সামান্য এক আমলা, আবার তাকে সরাসরি উল্লেখ না করে আঁকা কার্টুনের জন্য ১ বছর জেলে নির্যাতন করে তাকে মেরে ফেলেছে এই সরকার!

তার সাথে গ্রেফতার হয়েছিলেন কার্টুনিস্ট কিশোর। তার জবানবন্দিতে আমরা শুনেছি তাকে কীভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল।

এর আগে ফটোগ্রাফার শহিদুল আলমকে সাদা পোশাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছিল। প্রায় ১০০ দিন কারাবাসের পরে তাকে জামিন দেয়া হয়। তাকে নির্যাতন করা হয়, তার রক্তে ভেজা পাঞ্জাবি ফেলে দিয়ে গেঞ্জি পরিয়ে কোর্টে হাজির করা হয়। তার অপরাধ? তার অপরাধ হচ্ছে একটি বিদেশী চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেয়া, যেখানে তিনি নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামা বাচ্চাদের উপর ছাত্রলীগের নির্যাতনের ব্যাপারে কথা বলেছিলেন!

জঙ্গিবাদ নিয়ে গবেষণার কাজ করা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকের পুলিশ। বেশ কয়েক মাস তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। অনেক মাস পরে তাকে পাওয়া যায় উত্তরার একটা স্থানে, উদ্ভ্রান্ত অবস্থায়। তিনি কোথায় ছিলেন, কেন ছিলেন কেউ কিছু জানে না।

অধিকার ফাউন্ডেশনের আদিলুর রহমানকে ২০১৩ সালে গ্রেফতার করা হয়েছিল কারণ অধিকার হেফাজতের ৫ই মে’র অনুষ্ঠানে নিহতের সংখ্যা নিয়ে গবেষণা করেছিল। হেফাজতের দাবি ছিল সে রাতে তিন হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। অধিকারের গবেষণায় তারা ৬০ জন নিহত হওয়ার কথা বলেছিল। তিন হাজার বনাম ৬০। গ্রেফতার হলো কে? হেফাজত না অধিকার? অধিকার!

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই আচরণ নতুন কিছু না। এবং সরকারের অজানা কিছুও না। ২০১১ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী “সাদা পোশাকে পুলিশের অভিযান” নিষিদ্ধ করেছিলেন।

এর পরে নির্বাচনের আগে তাদের আবার সাদা পোশাকে পুলিশের অভিযানের প্রয়োজন পরায় তারা লুকিয়ে এই জিনিস আবার চালু করে। কয়েকদিনের মধ্যে ছোট্ট মফস্বলের নেতা থেকে শুরু করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও নিখোঁজ হতে শুরু করেন। ইলিয়াস আলী আজ পর্যন্ত নিখোঁজ! সালাউদ্দিন সাহেবকে পাওয়া গেছিল ভারতে।

দেশে পুলিশের সংখ্যা ঠিক কত? এত সাদা পোশাকের পুলিশ আসে কোথা থেকে? এখানে কি ছাত্রলীগ, যুবলীগ জড়িত? নাকি অন্য কেউ? বিদেশী কেউ?

কেন ভিন্নমতের লোকেরাই আক্রান্ত হবে? সরকারের ভেতরকার সমালোচকদের কেন কিছু হয় না? ব্যারিস্টার সুমন বা আব্দুল কাদের মির্জাদের কেন কেউ গ্রেফতার করে না?

এসব প্রশ্নের উত্তর কেউ দেবে? সবাই জানে উত্তর, কিন্তু কেউ কি দেবে?