
লক্ষ্মীপুরে টানা বৃষ্টি ও বন্যার পানি ঢুকে প্রায় আট লাখ মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছেন। এরমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন প্রায় ২৩ হাজার মানুষ। তবে বেশিরভাগ মানুষ কষ্ট করে বাড়িঘরেই রয়েছেন। বাকিরা উজানে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন।
নোয়াখালী থেকে অনবরত বন্যার পানি রহমতখালী খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরে ঢুকছে। দুর্গম এলাকাগুলোতে পানিবন্দিদের জন্য কোনো খাবার যাচ্ছে না। এজন্য ফেসবুকসহ নানানভাবে ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে মানুষ। দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছাতে পর্যাপ্ত নৌকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে রোববার (২৫ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলায় ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে বন্যার পানি ৬ ইঞ্চ বেড়ে গেছে। নোয়াখালীর মুছাপুর স্লুইস গেট ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এর প্রভাব লক্ষ্মীপুরে পড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ এখন পানি নিচে তলিয়ে আছে। ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ক্ষেত ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কোথাও কোথাও ৪-৫ ফুট পানি রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর পানিবন্দি বাসিন্দারা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৫৮টি ইউনিয়নের প্রায় প্রত্যেকটি এলাকাতেই পানি ঢুকে পড়েছে। মানুষজন খাদ্য সংকটে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
লক্ষ্মীপুরে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ, দিঘলী, চরশাহী, উত্তর জয়পুর, মান্দারী, দত্তপাড়া, বাঙ্গাখাঁ, লাহারকান্দি, তেওয়ারীগঞ্জ, ভবানীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের রহমতখালী খাল সংলগ্ন লামচরী, সমসেরাবাদ, বাঞ্চানগর, মধ্য বাঞ্চানগর, মজুপুর এলাকা, চররুহিতা, পার্বতীনগর, কমলনগরের তোরাবগঞ্জ, চরকাদিরা, রামগতির চরপোড়াগাছা, চরবাদাম, রামগঞ্জের লামচর, কাঞ্চনপুর, চন্ডিপুর, ভাটরা, ভোলাকোট, রামগঞ্জ পৌরসভা, ভাদুর, করপাড়া, দরবেশপুর, রায়পুরের সোনাপুর, কেরোয়া, চরপাতা, বামনী, চরমোহনা, রায়পুর, দক্ষিণ চরআবাবিল ইউনিয়ন ও রায়পুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা।
এরমধ্যে দিঘলী, চরশাহীসহ দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। এতে খাদ্য সংকটে রয়েছেন এসব এলাকার মানুষ। যে যেভাবে পারছেন ত্রাণের জন্য আহ্বান জানচ্ছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত নৌকা না থাকায় উদ্ধারকারী ও ত্রাণ সহায়তাকারীরা দুর্গম এলাকাগুলোতে যেতে পারছেন না বলে জানা গেছে।
মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সেলিম জানান, চারদিন ধরে তিনি খায়রুল এনাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে উঠেছেন। পানি বেশি হওয়ায় কেউই ঠিকমতো সেখানে গিয়ে তাদের খোঁজ নিচ্ছেন না। কোনো খাবারও জোটেনি তাদের।
বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের বাসিন্দা রাবেয়া বেগম বলেন, বাড়িতে প্রচুর পানি। থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। এজন্য স্বামী-সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়ি মান্দারী যাদৈয়া গ্রামে এসেছি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৫৫ মেট্রিক টন জিআর চাল ও ১০ লাখ নগদ টাকা (জিআর ক্যাশ) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জলার সদর উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন, রায়পুরে ২৫ মেট্রিক টন, রামগঞ্জে ৫০ মেট্রিক টন, রামগতিতে ২০ মেট্রিক টন ও কমলনগরে ৩০ মেট্রিক টন চাল রয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলার জন্য বরাদ্দ দুই লাখ টাকা।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নাহিদ-উজ জামান খান জানান, রোববার সকাল ৯টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলায় ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে বন্যার পানি ৬ ইঞ্চি বেড়েছে। রহমতখালী খাল হয়ে নোয়াখালীর পানি লক্ষ্মীপুরে অনবরত ঢুকছে। মুছাপুরের স্লুইস গেট ভেঙে গেছে। এতে এর একটি অংশের পানি বেগমগঞ্জ হয়ে লক্ষ্মীপুরে প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান জানান, জেলার বর্তমানে সাত লাখ ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন ২৩ হাজার ৪০৪ জন। এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৯৪৩ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খিচুড়ি রান্না করে পরিবেশন করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২৩ আগস্ট) থেকে নোয়াখালীর বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরে ঢুকতে শুরু করে। শনিবার বিকেল থেকে পানির চাপ বেড়ে যায়। এরমধ্যে লক্ষ্মীপুরে বৃষ্টিও অব্যাহত রয়েছে। এতে পুরো জেলায় প্রায় আট লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
 
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                        