অপূর্ব আহমেদ জুয়েলঃ আমরা এখন এমন এক সময়ের মধ্যে আছি যখন দেশ ও দেশের মানুষ এক চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারা চাইলেও এর থেকে পরিত্রান মিলছে না। দেশের সাধারণ মানুষ আজ এই সরকারের কাছে জিম্মি। গণতন্ত্র আজ বিলুপ্ত, জনগনের বাক স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করা হয়েছে, দেশের সমস্ত ক্ষেত্র আজ দুর্নীতিগ্রস্থ, সুদ-ঘুষের বানিজ্য, বেকার সমস্যা, লাগামহীন বাজারদর মানে সবদিক দিয়েই জন সাধারণ এক সীমাহীন অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যার আশু সমাধান প্রয়োজন। দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রশোজন যেখানে জনগন শান্তিতে ভোট দিয়ে যোগ্য সরকার নির্বাচিত করতে পারে। যে সরকার গনতান্ত্রিকভাবে দেশ পরিচালনা করবে এবং জনগনের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।
দেশজুড়ে বিভিন্ন রকম সমস্যা থাকলেও এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ক্ষমতা-কেন্দ্রীক নির্বাচন, আর তাই শুধু নির্বাচন সংকটের সমাধান দিতে পারবেনা। এজন্য রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের লক্ষ্যে কিছু মৌলিক ক্ষেত্রে ঐক্যমত্য অর্জন অপরিহার্য। এর মধ্যে রয়েছে বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির প্রর্বতন, এছাড়াও না-ভোটের পূন:প্রর্বতন এবং নির্বাচনী জোটের রাজনীতি বন্ধ করা উচিৎ।
তবে সবথেকে বড় কথা প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার পূর্নবিন্যাস, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতার সীমারেখা নির্ধারণ করতে হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশের সকল বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন। এর মানে হলো অন্যান্য প্রশাসনের কোন ভূমিকা নেই। থাকলেও তারা সক্রিয় নয়। এছাড়াও দুই মেয়াদের বেশী এক ব্যাক্তি সরকার প্রধান হতে পারবেন না এমন নীতিমালা প্রনয়ণ করা প্রয়োজন। দলীয় প্রধান হয়েও একই সাথে সরকার প্রধানের পদাসীন হবার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। সংসদ বর্জনের সংষ্কৃতি আইন করে বন্ধ করতে হবে, একইসাথে সংসদ সদস্যদের নৈতিক আচরণবিধি প্রনয়ণ ও কার্যকর করতে হবে। দেশ এখন বিরোধী দলশুন্য। তাই সরকারও স্বেচ্ছাচারিতার চরম সীমায় গিয়ে জনগনকে জিম্মি করে রেখেছে। সংসদে বিরোধী দলের অংশগ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে এমনকি বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করতে হবে। তাছাড়া সংবিধানের ৭০নং অনুচ্ছেদের সংশোধনীসহ রাজনৈতিক দলে গণতান্ত্রিক চর্চা বিকাশের পথ প্রশস্ত করা প্রয়োজন। রাজনৈতিক কার্যক্রম ও আন্দোলনের আচরণবিধি প্রনয়ণ ও বাস্তবায়ণ করতে হবে যেন এরূপ কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক অধিকার ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করার অপসংস্কৃতির অবসান হয়।
সর্বোপরি ক্ষমতার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে যে গগণচূম্বী সম্পদাহরণের সুযোগ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করছে তা নির্মূল করা।প্রয়োজন খুব শীগ্রই।
প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের মত প্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধ করতে হবে। এই সংস্কারের তালিকা যত দীর্ঘই হোক, এবং আপাত দৃষ্টিতে যত অবাস্তবই মনে হোক না কেন,গণতন্ত্র ও জনস্বার্থে শুরু করতে হবে এখনই।কালক্ষেপনের সময় নেই। এই রাজনৈতিক অচলাবস্থা, একনায়কতন্ত্র, প্রতিহিংসার রাজনীতি বেশিদিন চলতে পারেনা। জনগনকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আর এজন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিকল্প নেই।
রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সমাধান যে অবশ্যই সম্ভব এটা সকলেই জানে। এজন্য বিশেষজ্ঞ মতামতের কোন প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই কোন বিদেশীদের পরামর্শের কিংবা হহস্তক্ষেপের। দেশের যেকোন একজন সাধারন নাগরিকের দাবীই এরজন্য যথেষ্ট। আর তাই জাতীয় স্বার্থ ও জনগণের প্রত্যাশাকে অন্য সব কিছুর উর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ক্ষমতার এই নোংরা রাজনীতি যে কোন মূল্যে বন্ধ করতে হবে।
লেখকঃ অপূর্ব আহমেদ জুয়েল
সম্পাদক ও প্রকাশক , দৈনিক আলোড়ন