৮ হাজার ভাতাভোগীর আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ


দৈনিক আলোড়ন
৮ হাজার ভাতাভোগীর আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগীর প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভাতা বঞ্চিত ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা রোববার তদন্তে আসেন দৌলতপুর সমাজসেবা কার্যালয়ে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা তদন্তকালে দৌলতপুর সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমান তিনি এ ঘটনার রাজনৈতিক বলি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে মন্তব্য করেন।

এর আগে আত্মসাৎ করা ভাতার টাকা ফেরত চেয়ে ভাতা বঞ্চিতরা সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরে অভিযোগ দিলে ভাতার টাকা ফেরতের আশ্বাস দেওয়া হয়। পরে কয়েকজন ভাতাভোগীকে সাড়ে ৪হাজার টাকার স্থলে একহাজার করে টাকা দিয়ে অজ্ঞাত কারণে সিংহভাগ ভাতাভোগীদের আত্মসাৎ করা ভাতার টাকার বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে। এ ঘটনায় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক’র এনফোর্সমেন্ট কমিটির কাছে প্রেরিত অভিযোগ তদন্তকালে সেসময় দুর্নীতির হোতা দৌলতপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে। পরে ২০২৩ সালের ২৮জানুয়ারী ভাতা বঞ্চিত ভুক্তভোগীরা ভাতার টাকা ফেরতের দাবীতে জাতীয় প্রেসক্লাব ও গণভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন। গণভবনের সামনে অবস্থানকালে গণভবনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার আশ্বাসে তারা বাড়ি ফিরে আসেন। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল ৫ ফেব্রুয়ারি দৌলতপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসে তদন্তে আসেন সামজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেবব্রত দাস, সামজসেবা অধিদপ্তরের সমাজসেবা অফিসার রায়হান কবীর ও খুলনা বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক সমির মল্লিক। দিনভর তারা তদন্ত কাজে অংশ নেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে দৌলতপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে নতুন করে প্রায় সাড়ে ৮হাজার বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও দলিত হরিজন ভাতাপ্রাপ্তের তালিকায় নিবন্ধিত হন। এজন্য ২০২১ সালের জুন মাসে তাদের মোবাইল ব্যাংকে সরাসরি টাকা প্রেরণের জন্য এমআইএস সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু নিবন্ধিত হওয়ার পর থেকে কেউ ৩মাস কেউ ৬মাস কেউ একবছরের ভাতার অর্থ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত থাকেন। ভাতা বঞ্চিত ভুক্তভোগীরা দৌলতপুর সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নিলে জানানো হয় তাদের টাকা অন্য মোবাইল নম্বরে চলে গেছে। সে সময় নতুন ভাতাভোগীদের এমআইএস সম্পন্ন করার দায়িত্ব পালন করেন দৌলতপুর সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমান, তার কার্যালয়ের সুপারভাইজার তরিকুল ইসলাম, মশিউর রহমান এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের নিয়োগ করা প্রতিনিধি দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি টিপু নেওয়াজ।

বঞ্চিত ভাতাভোগীরা জানিয়েছেন, সমাজসেবা অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সংসদ সদস্যের নিয়োগ করা প্রতিনিধি টিপু নেওয়াজের যোগসাজসে আমাদের মোবাইল নম্বর আপলোড না করে তাদের নিয়ন্ত্রিত মোবাইল নম্বরে আপলোড করে সমুদয় টাকা তুলে নিয়ে তারা আত্মসাৎ করেছেন।

হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের চরদিয়াড় গ্রামের ভাতাভোগী ৮০বছরের বৃদ্ধ হোসেন মন্ডল, ইন্তাদুল, মাজু ও রাহেদ ঘোষ, প্রতিবন্ধী শাকিল ও মাহাতাব সহ ভাতা বঞ্চিত আরও অনেকে অভিযোগ করে বলেন, এমআইএস সিস্টেম চালু হওয়ার পর তারাসহ একই ইউনিয়নের প্রায় ৭ শতাধিক ভাতাভোগী ঠিকভাবে সরকারি ভাতার টাকা পাননি।

উল্লেখ্য, দৌলতপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমান কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. সরওয়ার জাহান এর নিয়োগ করা দৌলতপুর সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রতিনিধি টিপু নেওয়াজের আত্মীয় হওয়ার সুবাদে তদবিরের মাধ্যমে ২০২১ সালের ৭জানুয়ারী দৌলতপুর সমাজসেবা কার্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন। যার স্মারক নং ছিল ৪১,০১,০০০০,০০৮,১৯,০০৫,১২,১৫।

এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা সংসদ সদস্য এ্যাড. সরওয়ার জাহান এর মোবাইলফোনে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংসদ সদস্য এ্যাড. সরওয়ার জাহান এর নিয়োগ করা প্রতিনিধি দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি টিপু নেওয়াজের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এমপি সাহেবের প্রতিনিধি হিসেবে ভাতাভোগীদের সহায়তা করেন শুধু, তা ব্যতীত অন্য কিছু জানেন না বলে জানান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি রাজনৈতিক গেমের বলি হয়েছি। এর বেশী কিছু আর বলতে চাই না।

অভিযোগ তদন্তে আসা প্রধান তদন্তকারী কর্মকর্তা সমাজসেবা অধিদপ্তর ঢাকা’র উপ-পরিচালক দেবব্রত দাস তদন্তের বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

প্রতিবন্ধী, গবীর, অসহায় ও দুস্থদের আত্মসাত করা ভাতার টাকা ফেরত পেলে তারা দু’বেলা খেয়ে বাঁচবে এমন প্রত্যাশা ভাতা বঞ্চিত অসহায় মানুষগুলোর।