সিরাজগঞ্জে ব্যক্তিগত আয়নাঘর, চলত নির্যাতন


দৈনিক আলোড়ন
সিরাজগঞ্জে ব্যক্তিগত আয়নাঘর, চলত নির্যাতন

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় একটি ব্যক্তিগত আয়নাঘরের সন্ধান মিলেছে। যেখানে পাঁচ মাস বন্দি থাকার পর নিজেদের চেষ্টায় মুক্ত হয়েছেন প্রায় ৫০ বছর বয়সি এক নারী ও ৭৫ বছর বয়সি এক বৃদ্ধ। অভিযোগে উঠেছে, এখানে সাধারণ মানুষকে বন্দি করে চাঁদা আদায় ও জমি লিখে নেওয়াসহ নানা অপকর্ম পরিচালনা করা হতো। এ ঘরের সন্ধান পাওয়ার পর থেকে শত শত মানুষ সেটি দেখার জন্য ভিড় করছেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা বাড়িটি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত প্রধান ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।

উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন-রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের পূর্ব পাইকড়া গ্রামের মৃত রোস্তম আলীর ছেলে আবদুল জাব্বার (৭৫) ও লক্ষ্মী বিষ্ণু প্রসাদ গ্রামের মনসুর আলীর স্ত্রী শিল্পী বেগম (৫০)। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে তারা মুক্ত হন। আটক পল্লিচিকিৎসক নাজমুল হোসেন আরাফাত উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীকোলা গ্রামের রেজাউল করিম তালুকদারের ছেলে।

বন্দিদশা থেকে মুক্ত হওয়া শিল্পী বেগম জানান, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রায় ৬ মাস আগে তাকে অপহরণ করা হয়। এক মাস অন্যত্র রাখা হলেও ৫ মাস ধরে তাদের এই ঘরেই বন্দি করে রাখা হয়েছিল। মাঝেমধ্যে তাদের শরীরে ইনজেকশন দেওয়া হতো। তিনি আরও বলেন, পল্লিচিকিৎসক আরাফাত, শরীফ মেম্বার, কামরুল, হাফিজুল ও পান্নাসহ আরও তিনজন তাদের ওই ঘরে বন্দি করে রেখেছিলেন। তার সঙ্গে আবদুল জব্বার নামে আরও একজন বন্দি ছিলেন।

আরেক ভুক্তভোগী আবদুল জব্বার গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ বিষয়ে তার ছেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ৮ নভেম্বর বিকালে বাবা নিখোঁজ হন। পরে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ১২ নভেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাবা ওই আয়নাঘর থেকে কৌশলে বাড়িতে ফিরে আসেন। তিনি অসুস্থ হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, ওই ভবনের মালিক জহুরুল ইসলামের ছেলে সুমন সেখ। তার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ভবনের নিচের অংশে ৩-৪টি ছোট ছোট কক্ষ তৈরি করেছেন পল্লিচিকিৎসক আরাফাত। তিনি ও তার কিছু লোকজন গভীর রাতে এ বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ লোকজন সুমন ও আরাফাতের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন।*

 

রায়গঞ্জ থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পুলিশ এখনো ঘটনাস্থলে রয়েছে। আয়নাঘর কি না এখনো ক্লিয়ার করতে পারছি না। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নাজমুল ইসলাম আরাফাত নামে একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বন্দিদশা থেকে মুক্ত হওয়া ব্যক্তিরা নিখোঁজ হওয়ার পরই থানায় পৃথক দুটি জিডি করেছিলেন।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বলেন, ওই ঘরের বন্দিদশা থেকে দুজন উদ্ধার হয়েছে। এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে।/*