আওয়ামী লীগ মনে করছে, দেশটা তাদের জমিদারি, অন্যরা সব প্রজা: ফখরুল


দৈনিক আলোড়ন
আওয়ামী লীগ মনে করছে, দেশটা তাদের জমিদারি, অন্যরা সব প্রজা: ফখরুল

পদযাত্রা ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচিকে আওয়ামী লীগ নেতারা আন্দোলনে ভাটার টান বললেও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাঁরা সংঘর্ষে যেতে চান না। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমেই সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করবেন। তবে ধৈর্যেরও সীমা আছে বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।

গতকাল শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির মানববন্ধনে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। এ সময় আগামী ১৮ মার্চ দেশের সব মহানগরে প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে গতকাল রাজধানীর আব্দুল্লাহপুরের টঙ্গী ব্রিজ থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার মানববন্ধন করে বিএনপি। এ কর্মসূচিতে ব্যানার-ফেস্টুন হাতে নেতাকর্মীর ঢল নামে। তাঁরা হাতে হাত ধরে সড়কের পাশে মানব প্রাচীর গড়ে তোলেন। বিভিন্ন থানায়ও একই কর্মসূচি পালন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা ঘিরে ময়মনসিংহ জেলাকে বাইরে রাখলেও গত কয়েক মাসের ধারাবাহিকতায় বিএনপির কর্মসূচির দিনে শনিবারও রাজপথে ছিল ক্ষমতাসীনরা। প্রধান দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি হলেও তেমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে রাজধানীর মৌচাকে বিএনপি কর্মীর কাছ থেকে ব্যানার কেড়ে নেয় পুলিশ। মৌলভীবাজার সদরের চৌমোহনা ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা বিএনপি সভাপতিসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। এ সময় দুটি যানবাহনও ভাঙচুর করা হয়। আর নেত্রকোনায় কর্মসূচি পালনে বাধা দেয় পুলিশ। তবে দুই দলের কর্মসূচির কারণে যানজটে ভুগেছেন রাজধানীবাসী।

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে শনিবার সমমনা ৫৩টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন মানববন্ধন করে। তারাও ১৮ মার্চ মহানগরে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। ডিসেম্বরে যুগপৎ আন্দোলনে থাকলেও বিএনপির সাবেক জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী ছিল না মানববন্ধনে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা বিএনপির পদযাত্রা, মানববন্ধনের মতো নমনীয় কর্মসূচিকে কটাক্ষ করে নিয়মিত বক্তৃতা দিচ্ছেন। মানববন্ধনে এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমরা সংঘর্ষে যেতে চাই না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। ১০ দফা দাবি মেনে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, সংসদ ভেঙে দিন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

ধৈর্যেরও সীমা আছে। এ আন্দোলন দিনে দিনে তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করব।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মনে করছে, দেশটা তাদের জমিদারি, অন্যরা সব প্রজা। এখন আবার বলতে শুরু করেছে, বিএনপি ভয় পায়, বিএনপি নির্বাচন করবে। কিন্তু স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই– এ সরকার, শেখ হাসিনা ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বিএনপি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে কেউ ভোট দিতে যাননি। ১৫৪ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়েছেন। ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে। এখন খায়েশ হয়েছে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। সেই নীলনকশায় একই কায়দায় আগামী নির্বাচন করতে চাইছে ও তা পূরণে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পঞ্চগড়ে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করে ১৮৩ বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে মানুষকে বোকা বানানো যাবে না। মিথ্যা, গায়েবি মামলা দিয়ে মানুষকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।’ পরে সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য দেন।

গতকাল বাড্ডায় সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির মানববন্ধনে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করতে শান্তি সমাবেশের নামে দেশে নৈরাজ্য করছে তারা।’ এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হক প্রমুখ বক্তব্য দেন। অন্যদিকে কুড়িল বিশ্বরোডে বিএনপির সহপ্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, আজমপুর বাসস্ট্যান্ডে স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সের সামনে সহআন্তর্জাতিক সম্পাদক ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, ডেমরা-শ্যামপুর-কদমতলীতে চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন।

চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ী নুর আহম্মেদ সড়কে মহানগর বিএনপি, কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বরে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি মানববন্ধন করে। দক্ষিণ সুরমা রেলগেট ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় সিলেট জেলা এবং মহানগর বিএনপি মানববন্ধন করেছে। বরিশাল নগরের অশ্বিনী কুমার হলসংলগ্ন সদর রোডে মহানগর বিএনপি, জেনারেল হাসপাতালের সামনে উত্তর জেলা ও ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ে আদালতপাড়ার সামনে দক্ষিণ জেলা বিএনপি মানববন্ধন করে। কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় দলীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে জেলা বিএনপি।

এ ছাড়া ঝিনাইদহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মুন্সীগঞ্জ, মেহেরপুর, রাজশাহীতে জেলা ও মহানগর বিএনপি, সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, ফরিদপুর, পাবনা, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, মাগুরা, ঠাকুরগাঁও, পটুয়াখালী, দিনাজপুর, রংপুর, নওগাঁ, জয়পুরহাট, খুলনায় জেলা ও মহানগর বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করেছে।

অন্যান্য জোট ও দল: গণতন্ত্র মঞ্চ পল্টন মোড়ে, গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি যৌথভাবে আরামবাগে, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বিজয়নগর আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে, এলডিপি পূর্ব পান্থপথে দলীয় কার্যালয়ের সামনেসহ তিন স্থানে মানববন্ধন করে। গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ও পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পৃথক মানববন্ধন করে।