আওয়ামী লীগের মূলনীতি টাকা পাচার আর দুর্নীতি: মির্জা ফখরুল


দৈনিক আলোড়ন
আওয়ামী লীগের মূলনীতি টাকা পাচার আর দুর্নীতি: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন”আওয়ামী লীগের মূলনীতি হলো টাকা পাচার আর দুর্নীতি।

গত ১৪ বছরে দেশে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। বালিশ, পর্দা, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাসিনো কাণ্ড, ব্যাংক ডাকাতি, শেয়ারবাজার লুট, অর্থপাচার, মেগা প্রজেক্টে মেগা কেলেংকারি-একটার পর একটা ঘটে চলছেই।

বিদ্যুৎ খাতকে দুর্নীতির প্রধান ক্ষেত্র হিসাবে বেছে নিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। কেবল দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের গোপনে কেনা প্রপার্টির অর্থমূল্য ১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। সব টাকা পাচার করেছে ক্ষমতাসীনরা’।

শনিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে ‘আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে ও সরকারের পদত্যাগসহ দশ দফা দাবিতে’ যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসাবে এই সমাবেশ হয়।

এতে বিএনপি মহাসচিব গত ১৪ বছরে বিদ্যুৎ, সেবাসহ বিভিন্ন খাতের দুর্নীতির একটি খন্ডচিত্র তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এই সরকারের দুর্নীতির ফিরিস্তি দিতে গেলে এক দিনে হবে না, এক মাস লাগবে। যেখানে যাবেন সেখানে দুর্নীতি। এখন তারা পুরো বাংলাদেশের মানচিত্র খেয়ে ফেলতে শুরু করেছে। তাদের দুর্নীতির পুরোচিত্র খুব শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।’

বিএনপি মহাসচিবের দাবি, সেবা খাত, বিদ্যুৎখাত, আদানী কোম্পানীর সঙ্গে দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তি, টাকা পাচার, বেগমপাড়া ও সেকেন্ড হোম, সুইস ব্যাক, ইডিএফ এর আড়ালে ৭০০ কোটি ডলালের দুর্নীতি, মেগা প্রকল্পে মেগা চুরি, পদ্মা সেতু, পাতাল রেল, মেট্রো রেল, রেলওয়ে দুর্নীতি, স্যাটেলাইট প্রকল্পসহ আরও অর্ধশতাধিক সেক্টরে অনিয়ম আর লুটপাট হয়েছে’। যা সমাবেশে তুলে ধরেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন”আওয়ামী লীগ প্রতিদিন শতশত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে নিচ্ছে। ব্যাংকিং খাতকে লুট করে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে। রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা লুট হয়ে গেছে। যেখানে যাবেন সেখানেই দুর্নীতি। ইউনিয়ন পরিষদে যাবেন, আদালতে যাবেন সবখানেই দুর্নীতি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বাদ যায়নি।

সেখানেও ঘুস দিতে হয়। একজন পিয়নের চাকরির জন্য লাখ লাখ টাকা ঘুস দিতে হয়। কারণ এ সরকার জনগণের সরকার নয়। তারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে। দেশের আদালত প্রাঙ্গণেও এ সরকার ভোট চুরির রূপ দেখিয়েছে’।

বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন”এই রাষ্ট্রকে এখন সংস্কার করতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করতে হবে। এরপর ১০ দফা আন্দোলনকে নতুনভাবে সাজাতে হবে”।

হজের প্যাকেজ এতো কেন-প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘হজের ব্যাপারে দুষ্টামী করা ওদের পুরনো অভ্যাস। সাধারণ মানুষ যারা হজে যেতে চান তাদেরকে ৭ লাখ টাকা দিতে হবে। অথচ ভারতে আড়াই লাখ টাকা আর পাকিস্তানে ৪ লাখ টাকা। বাংলাদেশ বিমান চুরি করে একেবারে শেষ করে ফেলেছে। সেই চুরিকে লোপাট করার জন্য তাদের এখন বেশি করে টাকা নিতে হবে।”

দুপুরের আগে থেকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনের সামনে জড়ো হতে থাকেন। তারা সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত করে তুলেন নয়াপল্টন এলাকা। এসময় বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ভিন্ন ভিন্ন রঙ্গিন ক্যাপ, গেঞ্জি পড়ে সমাবেশে অংশ নেন। এক পর্যায়ে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়।

ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল­াহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিনের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা আহমেদ আজম খান, আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, রকিবুল ইসলাম বকুল, নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, কাদের গনি চৌধুরী, রওনাকুল ইসলাম টিপু, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, রাজীব আহসান, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, ড্যাবের অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ। এছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুও উপস্থিত ছিলেন।