কেরানীগঞ্জে যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে র্যাব পরিচয়ে (রর্্যাব কটি পরিহিত) স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৭১ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাসহ ৮ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ডাকাতদের কাছ থেকে লুন্ঠিত ১০ লাখ ৯ হাজার টাকা, ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি হাইস মাইক্রো গাড়ি, একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি নকল পিস্তল, হ্যান্ডকাপ, ফোল্ডিং ব্যাটন, র্যাবের পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে।
নিজ কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বুধবার এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার ডাকাত। এরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে একাধিক ডাকাতি করেছে। চক্রটি মূলত ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার তাঁতিবাজারে আসা স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে ডাকাতি করে। ব্যবসায়ীদের স্বর্ণ ও নগদ টাকা ডাকাতি করার জন্য সংঘবদ্ধ এই ডাকাতচক্র তাঁতিবাজার কেন্দ্রিক একটি বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। চক্রটির ৮ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবির জানান, এ ঘটনায় ভিকটিমের চাচাতো ভাই নিসার আহমেদ বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পর তদন্তে নেমে নানা কৌশল ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ডিএমপির বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮ ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার ডাকাতরা হলো- সুজন (৩৯), আলামিন ওরফে রেহান, কবির (৪৬), কামরুজ্জামান মিল্টন (৪৩), জাবেদ ওরফে সিরাজুল (৪০), নয়ন ওরফে বাবু (২৮), কামাল (৪৫) ও আ. রহমান ওরফে সাজ্জাদ (৪৫)। এদের মধ্যে গ্রেফতার সুজন রাজধানীর কোতোয়ালি থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা রয়েছে।
কামরুজ্জামান মিল্টন ও জাবেদ ওরফে সিরাজুল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। মিল্টনের বিরুদ্ধে দুটি ও জাবেদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। আ. রহমান ওরফে সাজ্জাদ বিমান বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য।
জানা গেছে, ৩১ জানুয়ারি ঢাকার দোহার উপজেলার জয়পাড়া বাজারের ‘ফাহাদ অলংকার নিকেতন’ এর মালিক নাহিদ হোসেন ও তার মামা (সিঙ্গাপুর প্রবাসী) আনোয়ার হোসেন খোকন দোহার থেকে পুরান ঢাকার তাঁতিবাজারে স্বর্ণ বিক্রি করেন। স্বর্ণ বিক্রি করে নাহিদ পান ৪০ লাখ টাকা ও খোকন পান ৩১ লাখ টাকা। এ টাকা নিয়ে সন্ধ্যায় তারা তাঁতিবাজার থেকে দোহার যাওয়ার জন্য নবকলি পরিবহনের একটি বাসে উঠেন। বাসটি কেরানীগঞ্জের কোনাখোলা পৌঁছলে সেটিকে একটি মাইক্রোবাস থেকে র্যাবের পোশাক পরা ৪ ব্যক্তি নেমে যাত্রীবাহী বাসে উঠে নিজেদের র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে বাসে দুজন আসামি আছে বলে জানান। এরপর তারা নাহিদ ও খোকনকে বাস থেকে নামিয়ে বাসে তুলে নিয়ে যান।
ভিকটিম নাহিদ বলেন, তারা বাস থামিয়ে আমাকে ও খোকন মামাকে জোর করে তাদের গাড়িতে তুলে চোখ ও হাত বেঁধে ফেলে। তারা আমাদের দুজনকে প্রচণ্ড মারধর করে ও বৈদ্যুতিক শক দিয়ে আহত করে। আমাদের টাকা মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার নিমতলায় গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমীনুল ইসলাম, সাজেদুর রহমান, মোবাশশীরা হাবিব, কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবির, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ।