দেশব্যাপী যে গণগ্রেফতার চলছে তাতে গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশই সাধারণ শিক্ষার্থী শ্রমিক দিন মজুর খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ যাদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই। এমনকি চলমান আন্দোলনের সাথে নুন্যতম সম্পর্ক নাই।।
দেশব্যাপী প্রায় ১০ সহস্রাধিক মানুষকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। শহরে শহরে জেলায় জেলায় এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামেও এই গ্রেফতার অভিযান চলছে।
প্রথম আলোর ভাষ্যানুযায়ী, ঢাকায় গ্রেপ্তার ৮৭ শতাংশের রাজনৈতিক পরিচয় নেই
ডিএমপির তথ্য (সোমবার পর্যন্ত)
২৪৩ মামলায় গ্রেপ্তার ২,৬৩০।
২,২৮৪ জনের রাজনৈতিক পরিচয় নেই।
বিএনপির নেতা-কর্মী ২৬৯ জন।
জামায়াত ও শিবিরের ৭৩ জন।
শ্রমজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের খোঁজে প্রতিদিন অসংখ্য স্বজন ভিড় করছেন ডিবি কার্যালয়, থানা ও আদালতের সামনে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলছেনন, তাঁরা কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করছেন না, গোয়েন্দা তথ্য ও ভিডিও ফুটেজ এবং সাক্ষীসাবুদ নিয়ে যাদের শনাক্ত করা গেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ভুলক্রমে যদি কেউ নিয়ে আসে তাহলে থানায় যাচাই করে যাঁদের নিরপরাধ মনে হচ্ছে, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কাজেই গণগ্রেপ্তার হচ্ছে না।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ঢাকায় ২৭০টি মামলায় ২ হাজার ৮৯১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক হিসাব বলছে, গত সোমবার পর্যন্ত রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ২৪৩টি মামলায় মোট ২ হাজার ৬৩০ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৮৪ জনেরই কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি, যা মোট গ্রেপ্তারের ৮৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ কোনো দলের সঙ্গে তাঁদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাঁদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষ।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বিএনপির নেতা-কর্মী আছেন ২৬৯ জন, জামায়াতের ৬৩ এবং শিবিরের আছেন ১০ জন। এ ছাড়া গণ অধিকার পরিষদের ৩ এবং জেপির আছেন ১ জন, যা মোট গ্রেপ্তারের ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ।
গ্রেপ্তার হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ ও পথচারী
উবারে মোটরসাইকেল চালান মোহাম্মদ হাসান। গত শুক্রবার সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে ইব্রাহিমপুরের বাসা থেকে বের হওয়ার পর তিনি নিখোঁজ হন। তাঁর খোঁজে গত সোমবার বিকেলে ডিবি কার্যালয়ে এসেছিলেন স্ত্রী নাজমা আক্তার ও শাশুড়ি মার্জিয়া বেগম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মার্জিয়া বলেন, ‘ছেলেটার বাবা-মা জীবিত নাই। অসহায়, এতিম। তাকে আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। সে কিছু করেনি। তাকে আন্দাজে পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার বা নির্যাতন করেনি দাবি করেন ওবায়দুল কাদের।
রাজনীতির সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই, এমন ব্যক্তিদের এত বেশি সংখ্যায় গ্রেপ্তারের কারণ কী হতে পারে, জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন সংকটের সময় গ্রেপ্তার-বাণিজ্যের কথা শুনে এসেছি। আর এখন তো মহাসংকট। এ সময় কে, কখন, কাকে গ্রেপ্তার করল, সেটার যদি তদারকি না থাকে, তাহলে আসলেই সমস্যা।’ তাঁর মতে, যখন গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে টার্গেট দেওয়া হয়, তখনই এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। গ্রেপ্তারগুলো বাণিজ্যে রূপান্তরিত হয়। এ জন্য রাজনৈতিক নেতাদের মতো কথা না বলে পুলিশকে তার কাজের সীমারেখার মধ্যে থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতিটি বিষয় গুরুত্বসহকারে তদারকি করতে হবে।
প্রকাশকঃ অপূর্ব আহমেদ জুয়েল