দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে গতি আনতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে আইনি প্রক্রিয়ায় নেতাকর্মীদের জামিনে মুক্ত করার পাশাপাশি নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি।
গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে ডাকা মহাসমাবেশ প-ের পরদিন থেকে গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত সরকার পতনের একদফা দাবিতে হরতাল, অবরোধ ও ভোট বর্জনের প্রচারণাসহ লাগাতার কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করছেন, ভোট বর্জনের আন্দোলন সফল হয়েছে। তবে একদফা দাবি আদায়ের আন্দোলন সফল না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্লান্তি ও হতাশা ভর করছে। এ ছাড়া নেতাকর্মীদের অনেকেই মামলায় আক্রান্ত হয়ে কারাবন্দি, নয়তো ফেরারি অবস্থায় কাটাচ্ছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শুক্রবার দেশের সব জেলা সদরে এবং আগামীকাল শনিবার রাজধানী ঢাকাসহ সব মহানগরে কালো পতাকা মিছিলের ডাক দিয়েছে দলটি। গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এটিই প্রথম কোনো কর্মসূচি করছে দলটি। দুদিনের এ কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
রাজধানীতে আগামীকাল শনিবার ডাকা কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচির বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মৌখিক অনুমতিও নেওয়া হয়েছে।
আড়াই মাস পর রাজপথের এ কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতির মাধ্যমে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মী ছাড়াও পেশাজীবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কাজ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। গত বুধবার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^রচন্দ্র রায় ও সালাউদ্দিন আহমেদ ভার্চুয়ালি ঢাকা বিভাগের প্রতিটি জেলা ও মহানগরের শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে সবাইকে
কালো পতাকা মিছিলে অংশ নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচিতে ব্যাপক লোক সমাগম ঘটে। সরকার বাধা না দিলে সাধারণ জনগণও এসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে থাকেন। শনিবারের শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচিতেও এর ব্যতিক্রম হবে না।
প্রাসঙ্গিক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পাতানো’, ‘ডামি’ ও ‘একতরফা’ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগও আতঙ্কে আছে। এ জন্য তারা আবারও পাল্টা ‘অশান্তি’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইচ্ছা করেই।
জানা গেছে, কালকের কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে প্রশাসনের অনুমতি মিলেছে। গত মঙ্গলবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ডিএমপি বরাবর কালো পতাকা মিছিলের বিষয়ে অবগত করে চিঠি দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, শনিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কালো পতাকা মিছিল শুরু হবে। এ জন্য প্রশাসনকে জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে মৌখিক অনুমতি পাওয়া গেছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী তাকে এটা নিশ্চিত করেছেন।
এদিন একই কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপির সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দাম, কারবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি এবং ‘অবৈধ সংসদ বাতিলসহ’ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদ বলেন, নেতাকর্মীদের মনোবল এখনো সুদৃঢ়। যে কোনো কর্মসূচি পালনে তারা সব সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে আছেন। ‘ফ্যাসিবাদ’ সরকারের বিরুদ্ধে তাদের চলমান আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে আগামীকালের কর্মসূচি খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করছেন।
প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, ঢাকা জেলা বিএনপি তার সর্বশক্তি নিয়ে শনিবার রাজধানী ঢাকার কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচিতে অংশ নেবে। ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপি, লেবার পার্টিসহ বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দলও আগামীকাল রাজধানীতে কালো পতাকা মিছিল করবে। পরদিন রবিবার বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।