দেবিদ্বারে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক অবরুদ্ধ


দৈনিক আলোড়ন
দেবিদ্বারে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক অবরুদ্ধ

কুমিল্লার দেবিদ্বারে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোক্তল হোসেনকে দিনভর অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বুধবার দুপুর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিক্ষোভ করেন তাঁরা।

এসময় উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা প্রধান শিক্ষক ও তাঁর জামাতার ব্যবহৃত দুটি মোটর সাইকেল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এছাড়াও উত্তেজিত জনতা একটি সিএনজি ও বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষের কয়েকটি দরজা ভাঙচুর চালায়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। বিক্ষোভ চলাকালে রাত ৮টার দিকে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। এসময় পুলিশের তিনটি গাড়ি ভাংচুর করে বিক্ষুবদ্ধরা।

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই পুলিশ সদস্য। আহতদের উদ্ধার করে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত পুলিশ সদস্যরা হচ্ছেন বাঙ্গরাবাজার থানার কনস্টেল জহিরুল ইসলাম ও দেবিদ্বার থানার কনস্টেবল সারোয়ার হোসেন।

এঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মুক্তল হোসেনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বেশ কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করেন, এর আগেও মোক্তল হোসেন অপর একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক থাকাকালে ছাত্রীদের সাথে এমন অপকর্ম করেছেন। পরে তাকে ওই স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।এবার দেবিদ্বারে এসে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সে এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায়।

এদিকে রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোশারফ হোসেন, দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডেইজি চক্রবর্তী, দেবিদ্বার-বিপাড়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মো. আমিরুল্লা, দেবিদ্বার থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধরসহ বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ। এরপর তারা আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান।

ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোক্তল হোসেন বুধবার দুপুরে স্কুলের বিরতির ফাঁকে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ডেকে তাঁর নিজের অফিসে কক্ষে নিয়ে যায়। পরে তাকে ভালোমত লেখা পড়া করা ও কোন ছেলের সাথে রিলেশন না জড়ানোর উপদেশ দেয়। এসব কথাবার্তার এক ফাঁকে ওই প্রধান শিক্ষক ওই ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করার চেষ্টা করলে ওই ছাত্রী দস্তাদস্তি করে দৌড়ে কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। দৌড়ে বের হওয়ার দৃশ্য বাহিরে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী দেখেন। যা পরে তাঁরা পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে স্বাক্ষী দেয়।

পরে ওই ছাত্রী বাড়ি গিয়ে তাঁর অভিভাবকদের ঘটনা জানালে তাঁর বাবা স্কুলে এসে আসলে ঘটনা জানাজানি হলে কয়েক ঘন্টার মধ্যে হাজার হাজার গ্রাম স্কুল মাঠে প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে জুতার মালা ও প্লেকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করে। এদিকে সন্ধ্যায় সাড়ে ৭টার দিকে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুঁড়ে এতে ৬/৭ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের উদ্ধার করে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে স্থানীয়রা।

এর আগে অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষকের জামাতা ঘটনাস্থলে আসলে জামাতার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
ভোক্তভোগী ওই ছাত্রীর বাবা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, দুপুরে আমার মেয়ে বাড়ি গিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। তাকে ঘটনার কারণ জানতে চাইলে সে প্রধান শিক্ষক মোক্তল হোসেন তার যা যা করেছে তা বর্ণনা দেয়। যা আমি বাবা হয়ে মুখে বলতে পারছি না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক যদি মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে না পারে তাহলে আমরা কোথায় যাব? আমি তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করব।

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক মোক্তল হোসেন বলেছেন, ‘এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানেয়াট ও ভিত্তিহীন। মিথ্যে কলঙ্ক রটিয়ে একটি রাজনৈতিক মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আমাকে স্কুল থেকে তাঁড়ানোর ষড়যন্ত্র করছে ।

রাতে যোগাযোগ করা হলে দেবিদ্বার থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। সংঘর্ষে কয়জন আহত হয়েছে আমরা যাচাই করে দেখছি। আর যেনো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এজন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোক্তল হোসেন বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে আছেন। ভুক্তভোগীর বাবা থানায় মামলা দিতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।