রাবির আহত শিক্ষার্থীদের বাসে করে নেওয়া হচ্ছে হাসপাতালে


দৈনিক আলোড়ন
রাবির আহত শিক্ষার্থীদের বাসে করে নেওয়া হচ্ছে হাসপাতালে

শত শত শিক্ষার্থী রক্তাক্ত। কারো মাথা ফাটা, কারো চোখ, কারো নাক, কারো মুখ। স্ক্রেচারে তাদের আনা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে। পাশেই শিক্ষার্থীরা চিৎকার করে ‘ও’ নেগেটিভ রক্তদাতা খুঁজছেন। এটি কোনো যুদ্ধক্ষেত্র নয়। শনিবার রাত ৯টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্য এটি। প্রতি মিনিটেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে বাড়ছে আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে সংকুলান না হওয়ায় বাসে করে আহত শিক্ষার্থীদের রামেকে নেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মারধরকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সংঘর্ষের সাড়ে তিন ঘণ্টা পরও ঘটনাস্থলে আসেনি পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি।

সংঘর্ষের সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আহত শিক্ষার্থীদের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে মেডিকেলে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। ইট-পাটকেলের আঘাতে অনেকের মাথা ফেটে গেছে। আহত হয়েছেন সংবাদকর্মীরাও। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আহত শিক্ষার্থীদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

ঘটনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, এদিন সৈয়দপুর থেকে রাজশাহী আসছিলেন সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্র। বাসে তার সঙ্গে সুপারভাইজার বাজে আচরণ করেন। বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে পৌঁছালে ওই শিক্ষার্থী বাস সুপারভাইজারের বাজে আচরণের জেরে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। এসময় বিনোদপুরের এক স্থানীয় বাকবিতণ্ডায় যুক্ত হন। ওই স্থানীয় ব্যক্তি ওই শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করেন। এর সূত্র ধরে স্থানীয় ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। স্থানীয়রা কয়েক দফা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট দিয়ে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালায়। ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। তারা এসময় পেট্রোল বোমা ছোড়ে বলেও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।

বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, স্থানীয়রা তুচ্ছ ঘটনায় প্রায়ই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। তারা এর আগেও অনেকবার শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত করেছে। এই ঘটনা ওইসবের পুনরাবৃত্তি।

এদিন রাত সাড়ে ৮টার পর (ঘটনার ৩ ঘণ্টা পর) বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের আসেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম ও অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর। এসময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম বলেন, ‘আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। অধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ায় অ্যাম্বুলেন্সে শিক্ষার্থীদের মেডিকেলে নেওয়া যাচ্ছে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। অনেক রক্তের প্রয়োজন। রক্তদাতাদের মেডিকেলে আসার আহবান জানাচ্ছি।

সংঘর্ষ বন্ধ করতে প্রশাসন পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে কি-না জিজ্ঞেস করলে দুই উপ-উপাচার্যই কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তারা বলেন, এসব নিয়ে কথা বলার সময় এখন নয়।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

নগর পুলিশের কমিশনার আনিসুর রহমান রাতে সাড়ে ৮টার দিকে বলেন, ‘আমরা অ্যাকশনে যাচ্ছি।’ তবে রাত সোয়া ৯টার সময়ও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।