সাম্প্রতিক গুম-নির্যাতনের তদন্ত চায় এইচআরডব্লিউ


দৈনিক আলোড়ন
সাম্প্রতিক গুম-নির্যাতনের তদন্ত চায় এইচআরডব্লিউ

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ওঠা গুম ও হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ডিবি পুলিশের হাতে নির্যাতনের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এইচআরডব্লিউ বলছে, ১৯ জানুয়ারি গাজীপুরে ৩৮ বছর বয়সী দোকানি মোহাম্মদ রবিউল পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ার পর এলাকায় সহিংস বিক্ষোভ হয়। অভিযোগ উঠেছে, নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি মারা গেছেন। পুলিশ অবশ্য বলছে, ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তার মৃত্যু হয়েছে।

২৯ জানুয়ারি আবু হোসেন রাজন নামে আরেক আইনজীবী অভিযোগ করেন, তিনি এক সপ্তাহ ধরে হাতিরঝিল থানায় আটক ছিলেন। এ সময়ের প্রতিদিন তাকে ডিবির প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো। তবে পুলিশ রাজনকে গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেনি।

এইচআরডব্লিউ আরও বলছে, রঘুনাথ খা নামের এক সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন, সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার অনেকদিন পর ২৩ জানুয়ারি ডিবি হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।

সংবাদমাধ্যমকে রঘুনাথ বলেন, থানায় তার চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে তার দুই কানে যন্ত্র বসিয়ে আধা ঘণ্টা ধরে ধাপে ধাপে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া এবং পায়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।

স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো আগেও বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) বিরুদ্ধে গুম-নির্যাতনসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে উল্লেখ করে এইচআরডব্লিউ জানায়, বাংলাদেশে নির্যাতনের অভিযোগগুলো নিয়ে তদন্ত কিংবা বিচার হওয়ার ঘটনা বিরল। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে একটি পর্যালোচনা শেষে জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটি বাংলাদেশ পুলিশকে ‘রাষ্ট্রের ভেতর আরেক রাষ্ট্র’ আখ্যা দিয়েছিল।

কমিটি তখন বলেছিল, পুলিশ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দায়মুক্তি নিয়ে কার্যক্রম চালাতে পারে। তাদের মোটেও জবাবদিহি করতে হয় না।

সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, এক দশক আগে বাংলাদেশে পাস হওয়া নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের আওতায় এখন পর্যন্ত নির্যাতনের একটি মাত্র ঘটনার বিচার হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির দেওয়া সুপারিশগুলো অনুসরণের জন্য কমিটির পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হলেও বাংলাদেশ তা উপেক্ষা করেছে। কমিটির সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে সব আটক কেন্দ্রকে স্বাধীন ধারার নজরদারির আওতায় নিয়ে আসা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা নির্যাতন ও অন্যায় আচরণের অভিযোগগুলোর তদন্ত করা।

এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের উচিত জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা, অভিযোগ তদন্ত করা এবং অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা।