সময়মতো ইডিএফ ঋণ ফেরত না দিলে দণ্ড সুদ


দৈনিক আলোড়ন
সময়মতো ইডিএফ ঋণ ফেরত না দিলে দণ্ড সুদ

রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) ঋণ আদায় জোরদারে এবার দণ্ড সুদ আরোপের সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্ধারিত মেয়াদে ঋণ পরিশোধ না হলে ব্যাংকের ওপর অতিরিক্ত সাড়ে ৪ শতাংশ সুদ আরোপ করা হবে।

গতকাল এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়। ডলার সংকটের কারণে এর আগে ইডিএফ তহবিল থেকে ঋণস্থিতি কমাতে এবং আদায় জোরদার করতে দফায়-দফায় সুদহার বাড়ানো, তদারকি জোরদারসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফ থেকে প্রতিশ্রুত ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত হলো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাবায়ন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। এর ফলে ইডিএফসহ বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের হিসাবে দেখানো যাবে না।

এ শর্তের পর এরই মধ্যে ইডিএফের আকার ৭ বিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে ৬ বিলিয়ন ডলারে নামানো হয়েছে। ঋণ আদায় সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে তহবিলের আকার ছোট করা হচ্ছে। তবে রপ্তানিকারকরা যেন সমস্যায় না পড়েন, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে ১০ হাজার কোটি টাকার আলাদা একটি তহবিল করেছে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, লক্ষ্য করা যাচ্ছে ইডিএফ থেকে ঋণ নিয়ে সময়মতো পরিশোধ করা হচ্ছে না। এ অবস্থায় পরিশোধের তারিখের পর সময়কালের জন্য ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ৪ শতাংশ অতিরিক্ত সুদ দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর হিসাব থেকে বাড়তি সুদের অর্থ কেটে নেবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ইডিএফের অর্থ সময়মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ফেরাতে দণ্ড সুদের বিধান করা হয়েছে। ব্যাংকের ওপর দণ্ড সুদ আরোপ হলে গ্রাহককেও দণ্ড সুদ দিতে হবে। বর্তমানে ইডিএফে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার আছে সাড়ে ৪ শতাংশ। আরও সাড়ে ৪ শতাংশ আরোপের ফলে স্বাভাবিকভাবে তার ঋণ পরিশোধ খরচ অনেক বাড়বে। এতে একদিকে ব্যাংক ও গ্রাহক ইডিএফ থেকে নতুন ঋণে নিরুৎসাহিত হবে, অন্যদিকে বিদ্যমান ঋণ ফেরতে গড়িমসি কমবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এক সময় ইডিএফের সুদহার ছিল অনেক কম। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ২ ফেব্রুয়ারি শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ব্যাংকগুলোর জন্য ৩ শতাংশ এবং গ্রাহক পর্যায়ে সাড়ে ৪ শতাংশ করা হয়।

কোনো ঋণ সময়মতো ফেরত না এলে এখন থেকে দণ্ডসহ ব্যাংক পর্যায়ে সুদহার দাঁড়াবে সাড়ে ৭ শতাংশ। আর গ্রাহককে দিতে হবে ৯ শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারিতে সুদহার বাড়ানোর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো ২ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে তহবিল নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে ৪ শতাংশ সুদে বিতরণ করত। এর আগে গত ২০ জুলাই এবং ৩ নভেম্বর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করে সুদহার বাড়ানো হয়।

ইডিএফ থেকে রপ্তানিমুখী শিল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণ আমদানির জন্য ঋণ দেওয়া হয়। মূলত তৈরি পোশাক এবং বস্ত্র ও প্লাস্টিক খাতের রপ্তানিকারকরা এ তহবিল থেকে ঋণ নেন। তুলা, সুতাসহ বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল আমদানির জন্য এ ঋণ ব্যবহার করা হয়। রপ্তানি সহায়ক তহবিল থেকেও একই কারণে ঋণ দেওয়া হবে। গত ১ জানুয়ারি গঠিত রপ্তানি সহায়ক তহবিল থেকে ব্যাংকগুলো মাত্র ১ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে তহবিল পাবে। ইডিএফের তুলনায় যা অর্ধেক। এর মানে টাকার ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো সুদ মার্জিন বেশি পাবে। আবার গ্রাহক পর্যায়েও সুদহার হবে কম। এ তহবিল থেকে ঋণ বিতরণে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ৪৯টি ব্যাংকের চুক্তি হয়েছে।

করোনা-পরবর্তী অর্থনীতিতে বাড়তি চাহিদা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেড়েছে। এ সময় ডলারের ওপর চাপ কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পরও জোগানের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে রেকর্ড ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে। গত অর্থবছর বিক্রি করা হয় ৬ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। এভাবে ডলার বিক্রির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। গত বুধবার রিজার্ভ কমে ৩১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে রিজার্ভ ছিল ৪৪ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ উঠেছিল সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। ইডিএফসহ বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া অর্থ বাদ দিলে রিজার্ভ অনেক কম হবে।