রজবের বাতাসে রমজানের সুর


দৈনিক আলোড়ন
রজবের বাতাসে রমজানের সুর

রজব মাস প্রায় শেষ। মাঝখানে শাবান। এর পরেই মাসেই খুলে যাবে রহমতের দুয়ার। পশ্চিম আকাশে মিষ্টি হাসি দিবে রমজানের বাঁকা চাঁদ। কিন্তু মুমিনের হৃদয় আঙ্গিনায় এখনই বাজতে শুরু করেছে রমজানের সুর।

রহমত মাগফেরাত আর নাজাতের আকুতিতে কাটছে সময়। মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে নবীজির শিখানো দোয়া-
আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান,ওয়া বাল্লিগনা রমাজান।

অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। (মিশকাতুল মাসাবিহ: ১৩৬৯)

রমজানকে সামনে রেখে হাফেজরা নিচ্ছেন তারাবির প্রস্তুতি। কুরআনের পাখি হাফেজদের কন্ঠে বাজছে কুরআনের সুর। মুসল্লিরাও প্রস্তুতি নিচ্ছে মন ভরে কুরআন শোনার। সারা মাস নামাজে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধাভরে কুরআন শুনে সজীব করবে নিজেদের মন ও ঈমান। তারা উন্নীত হবে তাকওয়ার উচ্চ সিঁড়িতে।

কিন্তু পথ অনেক দীর্ঘ। ৩০ দিনের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদত মগ্নতার। প্রতিটি সময় কল্যাণ অর্জনের। এজন্য প্রয়োজন মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি। কেননা বড় কোন অর্জনের প্রস্তুতিও নিতে হয় জোরালো ভাবে। সারাদিন রোজার সাথে সাথে সবধরনের পাপাচার থেকে বিরত থাকার প্রতিজ্ঞা করা।

দীর্ঘ সময় তারাবিক নামাজ। কিছুক্ষণ পরে তাহাজ্জুদ। ফাঁকে ফাঁকে জিকির ও তেলাওয়াতের জন্য মনকে তৈরি করা। দান খায়রাত এবং এবং সক্ষম হলে যাকাতের চিন্তা ফিকির করে নেওয়া। শারীরিক কোনো অসুস্থতা থাকলে রমজানের আগেই ডাক্তার দেখিয়ে ফেলা। প্রয়োজন হলে চেকআপ করে ঔষধ কিনে রাখা। যেন রমজানে ইবাদত মগ্নতায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক কোন বাঁধা সৃষ্টি না হয়।

এ সময়টাই প্রস্তুতির মোক্ষণ সময়। রমজানের প্রস্তুতির ব্যাপারে নবীজি বলেন, রমজান ও রজবের মধ্যবর্তী মাসটি মানুষ উদাসীনতায় কাটিয়ে দেয়। অথচ এই মাসে বান্দার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমি চাই আমার আমল আল্লাহর কাছে এ অবস্থায় পেশ করা হোক যে আমি রোজাদার। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৩৫৭)

একজন মানুষ সম্পর্কে তার কাছের লোকেরা সবচেয়ে ভালো জানে। নবীজির রমজানের প্রস্তুতি সম্পর্কে হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, আমি কখনো নবীজিকে রমজান ছাড়া পুরো মাস রোজা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা পালন করতে দেখিনি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮)

ইবাদতের প্রস্তুতি গ্রহণ করা নবীজির শিক্ষা। তাছাড়া ইবাদতে পূর্ণতা আনার চেষ্টা করলে এতে আল্লাহর সাহায্য আসে। আল কুরআনে বলছে, যারা আমার জন্য চেষ্টা সাধনা কবরে অবশ্যই আমি তাদেরকে সফলতার পথগুলো দেখিয়ে দিব। (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)

আমাদের জীবন আর জীবনে নাই। জীবন চলে গেছে মোবাইল আর প্রযুক্তির দখলে। সময়ের বিরাট অংশ গিলে খাচ্ছে ফেসবুক ও প্রচার মাধ্যম। সেখানে চাঁদ মামার খবর নেয়ার সময় কই!

রমজানের চাঁদের ব্যাপারে নিজেরা খোঁজখবর নেই না। এ দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি প্রচার মাধ্যম আর মসজিদের দায়িত্বশীলদের উপর। অথচ নবীজি নিজে রমজানের চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন। নিবেদিত প্রাণ অনেক সাহাবী থাকা সত্ত্বেও নবীজি চাঁদ দেখার দায়িত্ব তাদের উপর অর্পণ করেন নি। বরং নিজে শাবান মাসের চাঁদের হিসাব রাখতেন এবং অন্যদেরকে এজন্য উৎসাহিত করতেন। এবং রমজানের চাঁদ দেখে রোজা শুরু করতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৩২৫)

আমাদের জীবনে কত রমজানই এলো গেলো। আমরা হয়তো রহমত বরকতের ছিটেফোঁটাও গ্রহণ করতে পারিনি। কিন্তু এবারের রমজান হোক প্রস্তুতির রমজান। রমজানের অবারিত রহমত মাগফেরাত ও নাজাতের শিশির ঝরুক আমাদের সবার জীবনে। তাকওয়ার প্রদীপ জ্বলুক প্রতিটি হৃদয়ে।

লেখক: শিক্ষক, শেখ জনূরদ্দীন রহ. দারুল কুরআন চৌধুরীপাড়া মাদরাসা ঢাকা- ১২১৯