বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজে এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি ফি বাড়ানো হয়েছে। ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।
১৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ জারি করা প্রজ্ঞাপনে ভর্তি ফি ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকার তথ্য জানানো হয়েছিল। সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা বেড়েছে। অর্থাৎ ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ভর্তি ফি বাড়ানোয় মেডিকেল শিক্ষা সংকুচিত হবে। চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ থেকে মেধাবীরা বঞ্চিত হবেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের চিকিৎসা শিক্ষা-২ শাখার উপসচিব মাহবুবা বিলকিস স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের তথ্য অনুযায়ী-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি ফি বাড়ানোর বিষয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।
প্রজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়-নতুন সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। তবে টিউশন ফি ১০ হাজার টাকা করে চার বছরে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা বহাল রাখা হয়েছে।
এতে বলা হয়-সভার আলোচনা ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন-২০২২ এর ২২ ধারা অনুসারে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৬ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ভর্তি ফি ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
জানতে চাইলে চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী যুগান্তরকে বলেন, চিকিৎসা শিক্ষা প্রাইভেটাইজেশন কতটা মঙ্গলজনক হয়েছে বা হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। সরকার সিদ্ধান্ত দিলে সেটা সমন্বয় (অ্যাডজাস্ট) করতে হবে। সবার আগে প্রাইভেটাইজেশন অব মেডিকেল এডুকেশন কোয়ালিটি কন্ট্রোল তথা চিকিৎসা শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এক্ষেত্রে দেখতে হবে ফি বাড়ানোর অর্থ দিয়ে শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষাদান, প্রশিক্ষণ ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিত ও যথাযথ হচ্ছে কিনা। বেশি টাকা খরচ করে পড়ালেখা শেষ করে সমাজ ও রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারছে কিনা। ফি বাড়ানোর সঙ্গে শিক্ষাদানের গুণগত মান বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিতে হবে। যাতে গ্র্যাজুয়েশন শেষে বড় ডিগ্রি অর্জনে বাইরে গেলেও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারে। কোনোভাবেই যেন দেশের বদনাম না হয়।
চিকিৎসা শিক্ষাবিদ ও ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের সাবেক সিনিয়র উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক যুগান্তরকে বলেন, দেশ স্বাধীনের আগে পাঁচটি এবং পরে আটটি সরকারি মেডিকেল কলেজ ছিল। বর্তমানে শতাধিক মেডিকেল কলেজ হয়েছে। কিন্তু সরকারি মেডিকেলে শিক্ষার খরচ সহনীয় হলেও বেসরকারিতে খরচ আকাশচুম্বী। বেসরকারি মেডিকেল যতটা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ব্যবসায়িক মনোভাব রয়েছে। ফলে চিকিৎসা শিক্ষা ও সেবার মান অন্য সব দেশের চেয়ে সবচেয়ে নিচে। চিকিৎসা নিতে অসংখ্য মানুষ দেশের বাইরে যাচ্ছে। দেশের অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ভর্তি ফি বাড়ানোয় চিকিৎসা শিক্ষার সুযোগ সংকুচিত হবে। পরিবারের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়বে। চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ থেকে অনেক মেধাবী বঞ্চিত হবেন। এতে অনেকে নিরুৎসাহী হবেন।
তবে স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব যুগান্তরের কাছে দাবি করেন, চিকিৎসা শিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে যারা ভালো তারা সরকারি মেডিকেলে ভর্তি হয়। গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য কোটা রয়েছে। যারা বেশি অর্থ খরচ করে পড়তে চান তারা বেসরকারি কলেজে যান। ভালো লেখাপড়া করাতে গেলে খরচ বেশি হবে। কারণ সবকিছুরই দাম বাড়ছে।
মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা ১০ মার্চ : স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা থেকে অনলাইনে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু হয়েছে। ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারি মেডিকেলের ৪ হাজার ৩৫০ আসনের বিপরীতে ১ লাখ ২০ হাজার ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী অনলাইনে আবেদন করেছেন। প্রথমদিনে ৬০ হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। অনলাইন আবেদনের ফি ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত জমা দেওয়া যাবে। আগের বছরগুলোর তুলনায় এ বছর এমবিবিএসে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের আবেদন বেশি পড়েছে। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র বিতরণ ৬ মার্চ শুরু হবে এবং ৭ মার্চ পর্যন্ত চলবে। আগামী ১০ মার্চ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।