কয়লা ও আমদানি বিদ্যুতের দাপট কমবে তেল-গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন


Apurbo Ahmed Jewel
কয়লা ও আমদানি বিদ্যুতের দাপট কমবে তেল-গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন

ইসমাইল আলী২০২০-২১ অর্থবছর উৎপাদন শুরু করে পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত অর্থবছর বরিশাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসে। একই সময়ে উৎপাদন শুরু করে রামপালের প্রথম ইউনিট। চলতি অর্থবছর উৎপাদন শুরু করেছে এর দ্বিতীয় ইউনিট। এসএস পাওয়ারের পুরোটাই বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে চলতি অর্থবছর। এছাড়া মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র চলতি অর্থবছর শেষ নাগাদ পুরোপুরি চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। এতে দেশে কয়লা বিদ্যুতের উৎপাদন অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে।

এদিকে আদানির বিদ্যুৎ দেশে আসার পর ভারত থেকেও বিদ্যুৎ আমদানি বাড়ছে। এছাড়া আগামী অর্থবছর নেপাল থেকেও ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শুরুর কথা রয়েছে। সব মিলিয়ে কয়লার পাশাপাশি আমদানি বিদ্যুতের অংশ বাড়বে। তবে গ্যাস সরবরাহ আশানুরূপ না পাওয়ায় এ জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের শেয়ার আগামীতে কমবে। পাশাপাশি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসায় জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্রমান্বয়ে কমিয়ে দেয়া হবে। এতে চলতি ২০২৩-২৪ ও আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছর দেশের বিদ্যুৎ খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল মাত্র তিন দশমিক ৬৮ শতাংশ। এতে নিট উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় (আমদানিসহ) ৮৭ হাজার ৪০ গিগাওয়াট ঘণ্টা। তবে চলতি অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১০ দশমিক ০৯ ও আগামী অর্থবছর আট দশমিক ৯৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে। এতে ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছর নিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ৯৫ হাজার ৮০৫ গিগাওয়াট ঘণ্টা এবং এক লাখ চার হাজার ৪২৩ গিগাওয়াট ঘণ্টা।

গত অর্থবছর কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১০ হাজার ৭৯ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছর এ খাত থেকে সম্ভাব্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ধরা হয়েছে ২২ হাজার ১৮৮ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা ২৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। আর আগামী অর্থবছর কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর সম্ভাব্য উৎপাদনের পরিমাণ ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ১৮৬ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা ২৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অন্যদিকে গত অর্থবছর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৪২৭ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আদানির বিদ্যুৎ যুক্ত হওয়ায় চলতি অর্থবছর আমদানি বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১৬ হাজার ৩২৫ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা ১৭ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং আগামী অর্থছর ১৮ হাজার ৮৯০ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা ১৮ দশমিক ০৯ শতাংশ।

এদিকে গত অর্থবছর উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫১ দশমিক ২৫ শতাংশ তথা ৪৪ হাজার ৬০৮ গিগাওয়াট ঘণ্টা এসেছে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে। এজন্য গ্যাস দেয়া হয়েছিল দৈনিক গড়ে ৯৬৪ এমএমসিএফ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ গ্যাস দেয়া হয় এক হাজার ১৮৯ এমএমসিএফ ও সর্বনিম্ন ৮০০ এমএমসিএফ। যদিও চলতি অর্থবছর বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ কিছুটা বাড়ানো হবে বলেই ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছর দৈনিক গড়ে এক হাজার চার এমএমসিএফ (মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস পেতে পারে বিদ্যুৎ খাত। এর মধ্যে দৈনিক সর্বোচ্চ এক হাজার ২০৬ এমএমসিএফ ও সর্বনিম্ন ৭৩১ এমএমসিএফ গ্যাস দেয়া হতে পারে।

গ্যাস সরবরাহ বাড়লেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। কারণ বর্তমানে গ্যাসচালিত কেন্দ্রগুলো পুরোদমে চালাতে দুই হাজার ২৪১ এমএমসিএফ গ্যাস দরকার। গ্যাস সরবরাহ কিছুটা বাড়ায় চলতি অর্থবছর গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় উৎপাদন বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৪৭ হাজার ৫১৯ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা ৪৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ কমে যেতে পারে। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য গ্যাস সরবরাহ ধরা হয়েছে গড়ে দৈনিক ৯৪৭ এমএমসিএফ। এর মধ্যে দৈনিক সর্বোচ্চ এক হাজার ১৫৮ এমএমসিএফ ও সর্বনিম্ন ৭২০ এমএমসিএফ গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। এতে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে আসবে ৫০ হাজার ৯৫৮ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা ৪৮ দশমিক ৪০ শতাংশ।

পিডিবির তথ্যমতে, চলতি ও আগামী অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন সবচেয়ে বেশি কমবে ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলচালিত কেন্দ্রগুলোয়। এর মধ্যে গত অর্থবছর ফার্নেস অয়েলচালিত কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ এসেছে ১৮ হাজার ৩২২ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা ২১ দশমিক ০৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছর তা অনেকখানি কমে দাঁড়াবে সাত হাজার ৬৩৬ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা সাত দশমিক ৯৭ শতাংশ। আগামী অর্থবছর তা আরও কমে দাঁড়াবে দুই হাজার ৫৭৯ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা দুই দশমিক ৪৭ শতাংশ।

এদিকে গত অর্থবছর ডিজেলচালিত কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ এসেছে দুই হাজার ৩২৪ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা দুই দশমিক ৬৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছর তা শূন্যের কাছাকাটি নেমে আসবে। এ সময় ডিজেলচালিত কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে মাত্র ৪৪১ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ। আর আগামী অর্থবছর তা শূন্যে নেমে যাবে। তবে ওই সময় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়ে যাবে। এতে আগামী অর্থবছর ওই কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে এক হাজার ৭৫ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা এক দশমিক ০৭ শতাংশ।

এগুলোর বাইরে গত অর্থবছর নবায়নযোগ্য জ্বালানির কেন্দ্রগুলোয় (সৌর, বায়ু) বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৬৭০ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা শূন্য দশমিক ৭৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছর এ খাত থেকে আসতে পারে ৯০১ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং আগামী অর্থবছর এক হাজার ৩৩৭ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা এক দশমিক ২৮ শতাংশ। আর গত অর্থবছর হাইড্রো বিদ্যুৎ পাওয়া যায় ৬০৯ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ। চলতি অর্থবছর তা সামান্য বেড়ে দাঁড়াবে ৮০৫ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং আগামী অর্থবছর ৭৮৩ গিগাওয়াট ঘণ্টা বা শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ।