বাংলাদেশে ব্লগার হত্যা ও সরকারের নিরবতা, মামলা গড়ালো কতদূর?


Apurbo Ahmed Jewel
বাংলাদেশে ব্লগার হত্যা ও সরকারের নিরবতা, মামলা গড়ালো কতদূর?

(অপূর্ব আহমেদ জুয়েল) : বাংলাদেশে ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৫ জন ব্লগারকে তাদের লেখালেখির কারণে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশে একের পর এক ব্লগার হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক স্তরে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে৷ তবে দেশটির সরকার এই নিয়ে বিশেষ ভাবিত নয়৷ বরং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খুনি ধরার চেয়ে ব্লগারদের লেখালেখির দিকে মনোযোগী বেশি৷.

২০১৫ ছিল ব্লগার হত্যার সাল। বাংলাদেশের ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম স্লিপার সেলের মাধ্যমে সেই বছর একের পর এক মুক্তচিন্তক ব্লগারদের হত্যা করেছিল নির্মমভাবে। তখন এদেশের সরকারও নিরব ছিল ব্লগার হত্যা নিয়ে। শুধু নিরবই নয়, ইসলামিস্ট কিলাররা যখন একটার পর একটা ব্লগার হত্যা করে যাচ্ছে, তখন নাস্তিক হত্যার এই দায় নেবে না বলে ইসলামি জঙ্গীদের পরোক্ষভাবে আরো উস্কে দিয়েছিল শেখ হাসিনা সরকার। এতে লাভ আছে সরকারের । তারা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানকে বুঝাতে সক্ষম হচ্ছে, “-দেখো আমরা নাস্তিক ব্লগারদের পাশে নেই, আমাদের সরকার ইসলামের পাশেই আছে। দেখো আমরা ব্লগার হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনছি না।”

ব্লগার ও মুক্তমনাদের ওপর হামলা প্রতিহত করতে ব্যর্থতা ও রাজনৈতিকভাবে কট্টর ইসলামপন্থীদের রোষের মুখে পড়ার ভয়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলে। একের পর এক ব্লগার হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধর্মনিরপেক্ষ সরকার খুনিদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু সেটা ছিল কথার কথা।

একেকটি ব্লগার হত্যার পর আওয়ামিলীগ সরকার তার প্রশাসনকে তৎপর না রেখে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এটাই বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, আমাদের সরকার শুধু ইসলাম ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের। এতে আওয়ামিলীগ সরকার মুসলমানের কাছে এই পরীক্ষায় ভালোই উত্তীর্ণ হয়েছেন। এই সরকারের তৎপরতা দেখি তখনই, যখন গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরায় ইসলামি জঙ্গী নিবরাসরা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম আল্লার নামে বড় আকারে সন্ত্রাসী হামলাটা পরিচালিত করে। সারা পৃথিবীজুড়ে বাংলাদেশ সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে দেখার পর আওয়ামিলীগ সরকারের প্রশাসনের তৎপরতা কাকে বলে ও কতো কি কি দেখেছি তখন। তখন জঙ্গীদের পারলে এদেশের পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী গোপন সুত্রে খবর পেয়ে ইঁদুরের গর্ত থেকেও তুলে আনছেন। এরপর অনেক জঙ্গীও ধরা পড়েছে। স্পেশাল পুলিশ ফোর্স সোয়াতের অপারেশনে অনেক জঙ্গীর মৃত্যু হয়েছে। ২০১৬ সালে গুলশানের হোলি আর্টিজান হামলার পর ইসলামিস্ট জঙ্গীদের হাতে আর কোনো নাস্তিক, মুক্তমনা ব্লগার, মন্দিরের পুরোহিত্য ও যাজক হত্যার শিকার হয়েছে এমন শোনা যায়নি। তার মানে গুলশান হামলার ২০১৬ সালে মে মাসের পর তখন সরকারের প্রশাসন জঙ্গী দমন করার জন্য আন্তরিক হয়ে উঠেছিল।

২০১৫ সালে যে পাঁচ-ছয়জন মুক্তচিন্তক ব্লগার ও প্রকাশককে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। আমি বিশ্বাস করি এখানে সরকারের পরোক্ষভাবে মদদ ছিল। একটা ছেলে কোথায় থাকে, কি করে, এটা সহজে জঙ্গিদের জানার কথা নয়। আচ্ছা ধরে নিলাম জঙ্গীরা এদেশের ব্লগারদের লোকেশন জানে, লোকেশন জেনেই জঙ্গীরা ব্লগারদের হত্যা করতে যায়। আর ব্লগাররা হত্যার শিকারও হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, তখন আমাদের পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা কি করে? তাদের কাজ কি? তারা যদি ইসলামি জঙ্গীদের হাতে একজন ব্লগার হত্যার পরিকল্পনা আঁচ করতে না পারে, তাহলে তাদের রাষ্ট্রের প্রশাসনে বড় অংকের বেতন দিয়ে পোষার দরকার কি? যখন এদেশে বড় আকারে হামলা করার জন্য ইসলামি জঙ্গীরা পরিকল্পনা করার জন্য কল্যানপুরে আস্তানা গেঁড়েছিল, তখন এদেশের গোয়েন্দারা তো জঙ্গীদের গোপন আস্তানার খবর ঠিকই পেয়েছিল। এবং সেখানে স্পেশাল পুলিশ ফোর্স তাদেরকে কুত্তার মতোও মেরেছিল! এখন এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, ব্লগার হত্যায় এই আওয়ামিলীগ সরকার ও প্রশাসনের সরাসরি মদদ আছে।

একটা নাস্তিক মুক্তমনা ব্লগার হত্যা মানেই আওয়ামীলীগের দিকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আরো একটু দৃষ্টি আকর্ষণ করা। মুসলমানদের আরো একটু আস্থা কুঁড়িয়ে নেয়া।এই আওয়ামিলীগ সরকার এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সমর্থনের নেশায় আরো ভয়ংকরভাবে ব্লগার হত্যার নাটকে মেতে উঠবে! নিজেরা চক্রান্ত করে ইসলাম অবমাননা করে চালিয়ে দেবে হিন্দু যুবকদের নামে। তারপর আরো কিছু হিন্দু সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে শ্মশান বানাবে। এটা হলো রাজনৈতিক খেলা। রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রয়োজনে একেকটা দল হায়েনা থেকেও নিষ্ঠুর হয়! এই আর নতুন কথা নয়।

আওয়ামিলীগ সরকার নৈপথ্যে থেকে স্লিপার সেলদের নির্দেশে দিয়ে ব্লগার হত্যা করে ধর্মপ্রান মুসলমানদের দৃষ্টি তার দলের দিকে ফেরানোর চেষ্টা করবে। পাশাপাশি মুসলমানদের নজর কাড়ার জন্য সংখ্যালঘু নির্যাতনও বাড়িয়ে দেবে। গত দুদিন আগে কলকাতা পুলিশের কাছে বাংলাদেশি জঙ্গী ধরা পড়ায় ইতিমধ্যে আমরা সেই খবর জেনেছি। সেই জঙ্গীর হাতে বাংলাদেশের ব্লগার হত্যা করার নতুন তালিকা পেয়েছে তারা। এটা খুবই আতঙ্কের বিষয়। এখন সরকারের অপরাজনীতির বর্বর হত্যা-লীলা থেকে এদেশের ব্লগারদের বাঁচতে হলে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বনের বিকল্প নেই। এদেশের সব ব্লগারদের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিতে হবে।
ব্লগার নিলয় হত্যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে ৫ম ব্লগার হত্যার ঘটনা ঘটলো। চাপাতির আঘাতে একই কায়দায় এই সিরিজ হত্যাকান্ড ঘটে চলেছে। সব হত্যার দায় স্বীকার করে এসেছে আনসার বাংলা বা আনসার আল ইসলাম।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক: অপূর্ব আহমেদ জুয়েল (দৈনিক আলোড়ন)